শীতকাল এলেই হিমেল হাওয়া আর মিঠেকড়া রোদের ওমে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিগুলো ফিরে ফিরে আসে। ছুটির মেজাজে মনের ভিতর ছোটবেলার আনন্দগান বেজে ওঠে। সেকথাই বাঙ্ময় হয়েছে ‘সেই বইটা’য় রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটক বিষয়ক আলোচনা “জীবনমাঝে আনন্দগান বাজে”-তে। ‘ডাকঘর’ প্রথম প্রকাশ পায় ১৯১২র জানুয়ারিতে - তাই সময়ের সমাপতন তো আছেই, কিন্তু মূলতঃ কিশোর অমলের মুক্তিকাঙ্খা যেন আজকের পারিপার্শ্বিকতা আর গগনচুম্বী প্রত্যাশায় পিষ্ট, মুঠোফোনে বন্দী শহুরে বাল্যকালেরই প্রতিফলন; তাই শিশু-কিশোর সংখ্যার জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একই পথে হেঁটে এই সংখ্যায় এগোল প্রবহমান উপন্যাস “কাটাঘুড়ি আট”ও – প্রধান চরিত্র সুমি আট পেরিয়ে পা রাখল নয়ের চৌহদ্দিতে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকে, শৈশব থেকে কৈশোরে আর তারপর পারিবারিক চাপানউতোরের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলল দশ-এগারো-বারো পেরিয়ে বয়ঃসন্ধির মোহনার দিকে। তবে এ সংখ্যায় কিন্তু আনন্দের উপাদানই বেশি। নাম আর রঙচঙে জমজমাট প্রচ্ছদটা দেখেই বুঝে গেছেন নিশ্চয় - শীতের দিনের মতোই এ সংখ্যা বর্ণময়, এক্কেবারে লেখায় লেখায় জমজমাট। থাকছে ১৮টা কাব্যপ্রবাহ, যদিও তাদের বেশিরভাগকেই কাব্য না বলে ছড়া বলাই যুক্তিযুক্ত হবে, ৮টা কাহিনীপ্রবাহ, ১টা খুশির প্রবাহ – সবকটাই শিশুকিশোরের উপযোগী। গল্প-কবিতার বিষয়বৈচিত্র্যও দেখার মতো – পুঁচকেদের গোয়েন্দাগিরি, রূপকথা, রহস্য, গুপ্তধন, বিজ্ঞানের গল্প ও কবিতা, মহাকাশ, ভুতের ছড়া, ঈশ্বরপ্রেম, মনীষীপূজন, স্মৃতিচারণ – কী নেই এবারে! গতবারের মতো এবারেও থাকল প্রবাহ প্রতিযোগিতার সেরা বিজ্ঞান বিষয়ক গল্প, সেরা কবিতা আর সেরার সেরা লেখা। গত সংখ্যার একমাত্র অসমাপ্ত গল্প “অলকেশ” এই সংখ্যায় থাকছে না শিশু-কিশোর সংখ্যায় প্রযোজ্য নয় বলে। গল্পটি আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত হবে। তবে তার পরিবর্তে শুরু হচ্ছে ৩টে টাটকা প্রবহমান গল্প। এছাড়া, রীতি অনুযায়ী অন্যান্য সব বিভাগেই থাকছে বিষয়-সংশ্লিষ্ট লেখা, যেমন ‘আটপৌরে’-তে টক-ঝাল-মিষ্টি স্মৃতিচারণ “ধন্যি মেয়ে”, ‘হারিয়ে যাওয়া পেশা’-তে এক পেলব পেশার গপ্পো “ঘুম-ভাঙানিয়া” – শীতকালে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার নাম শুনলেই হৃৎকম্প হয় কিনা বলুন! বাংলাসাহিত্যে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কালজয়ী সৃষ্টি টেনিদা - শিশুকিশোর সংখ্যায় যার উল্লেখ না থাকলে সংখ্যাটি অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তাই টেনিদার গল্প নিয়ে তৈরি সিনেমা চারমূর্তি এবারের ‘সিনেম্যাটিক’এর বিষয়বস্তু। এছাড়া বিশেষ উল্লেখ্য ‘প্রবাহে ভেসে’তে উড়িষ্যার রঘুরাজপুরের এক অনবদ্য অভিজ্ঞতার বর্ণনা “ছেলেমানুষী নাচ” যা আর পাঁচটা ভ্রমণকাহিনীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। থাকল দুটি প্রবন্ধও – ‘জীবনপ্রবাহ’-তে বরেণ্য শিশুসাহিত্যিক লীলা মজুমদার ও তাঁর ম্যাজিক কলম-কে নিয়ে একটি অনবদ্য লেখা আর সময়প্রবাহ-তে এ প্রজন্মের বইপড়ার অনভ্যাস নিয়ে কিছু কথা। ‘হেসেখেলে হেঁশেল’-এ থাকল একটা চটজলদি ক্রিসমাস রেসিপি। তবে হ্যাঁ, শুধু যে শিশু-কিশোরদের জন্য বা তাদের উপযোগী, তা নয়, এ সংখ্যা কিন্তু বাল্যকাল বিষয়কও। তাই সন্তানদের সাথে সাথে তাদের বাবা-মা এবং ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অবশ্য পঠনীয়। তাই আমাদের অনন্য বিভাগ ‘কথা হোক’-এ এবার থাকছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক আর গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা – প্রখ্যাত মনোবিশ্লেষক এরিকসনের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে শিশুর মনোসামাজিক ব্যক্তিত্ব বিকাশ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী পর্যালোচনা। এবার ম্যাপের কম্পাস ইন্ডিয়ার দিকে ঘুরেছে – তাই ‘ম্যাপ পয়েন্টিং’-এ থাকল গুজরাট ভ্রমণ মূলতঃ রাণ অঞ্চলের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা “শ্বেত মরুর জ্যোৎস্না”, যা শিশুদের সাথে সাথে তাদের পরিবারকেও মুগ্ধ করবে। আপনারা তো জানেনই, প্রবাহ-র আরেক বিশেষত্ব ‘অলঙ্করণ কথা’ – এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমার-আপনার সব্বার ছোটবেলার অর্ধেকটা জুড়ে যদি রহস্য আর রূপকথা থাকে, বাকি অর্ধেক জুড়ে থাকবেই থাকবে মহাকাশ-ছহায়াপথ-ব্ল্যাকহোল আর ভিনগ্রহ-এলিয়েন-উড়ন্তচাকি নিয়ে রোম্যান্টিকতা। তাই সুযোগ পেয়েই “মহাকর্ষ” কবিতার সঙ্গে লেজুড় জুড়ে দিয়েছি - নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের গপ্পো, ওই যে, যেখানে রাখা আছে নিল আর্মস্ট্রং-এর আনা চাঁদের পাথর-টা! রইল দুটো ‘জানেন কি’-ও - নেতাজি-র জন্মদিন সামনেই, সেই উপলক্ষ্যে তাঁর জার্মানি থেকে জাপান যাত্রার সময়ের কিছু অজানা, বলা ভাল কম জানা, তথ্য। এছাড়া পৃথিবীর কনিষ্ঠতম হেডমাস্টার বাবর আলি-র মনছোঁয়া কাহিনী। শেষ করব প্রবাহ-র নতুন বিভাগ ‘কলিকাতা ইতিকথা’ দিয়ে। প্রথমবারের লেখা বাংলার সার্কাস। এখনকার প্রজন্ম জানুক না জানুক, অনেকেরই মনে আছে নিশ্চয়, রংবেরঙের তাঁবু, ক্লাউনের মজারু কাণ্ডকারখানা, বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক আর হাতির খেলা, কথা বলা কাকাতুয়া, বুকের ওপর মোটরগাড়ি, আর একদম শেষে ঘাড় উঁচিয়ে শ্বাস বন্ধ করে ট্রাপিজের খেলা দেখা
A new age publishing house that promises to inspire and support creativity in budding writers.